ঢাকা , শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫ , ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
লালদিয়া-পানগাঁওয়ে ১০ বছর করমুক্ত সুবিধা পাবে ২ বিদেশি কোম্পানি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল সর্বোচ্চ আদালতের জুলাইয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা ফারাবীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে আহত জাতীয় নির্বাচনের আগে সক্রিয় আন্ডারওয়ার্ল্ড মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ গ্রেফতার ৪ পাবনায় চিরকুট লিখে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার গলায় ফাঁস দিয়ে নির্মাণ শ্রমিকের আত্মহত্যা রাঙামাটিতে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল, সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ ফেনীতে পৃথক ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু বান্দরবানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলা আটক ৫ ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাসায় অগ্নিসংযোগ ককটেল বিস্ফোরণ অপহরণ হয়েছে সৌদি আরবে মুক্তিপণ আদায় বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তী দেশে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে-টুকু পুলিশের ওপর হামলা চললে নিজেদের ঘরবাড়ি নিজেরাই পাহারা দিতে হবে-ডিএমপি কমিশনার রাজস্ব কর্মকর্তা ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ থেকে সরে যাচ্ছে বড় ক্রেতারা ২০২৬ বিশ্বকাপ ড্রয়ের শীর্ষে আছে যারা ৫২ বছরে প্রথমবার এমন কীর্তি গড়লেন হাকিমি ৯ বছরের মধ্যে সেরা অবস্থানে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড গড়লেন শাই হোপ

কারাগারে ফিরছে না স্বাস্থ্যকর পরিবেশ

  • আপলোড সময় : ১৯-১১-২০২৫ ১১:৪২:২৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-১১-২০২৫ ১১:৪২:২৮ পূর্বাহ্ন
কারাগারে ফিরছে না স্বাস্থ্যকর পরিবেশ
দেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে আটক রয়েছে প্রায় দ্বিগুণ বন্দি। আর মাত্রাতিরিক্ত কারাবন্দির কারণে কারাগারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে না কারা কর্তৃপক্ষ। দেশের ৬৮টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার কিন্তু রয়েছে ৮০ হাজারের বেশি বন্দি। তার মধ্যে ৭৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ আটক আসামির মামলাই বিচারাধীন। এমনকি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি অনেক বন্দির বিচার কাজও। ফলে কারাগারের অনেক বন্দিরই দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর বিচারিক দীর্ঘসূত্রতায় ওসব বন্দির বড় একটি অংশ দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। বর্তমানে কারাগারগুলোয় অনেক বন্দি রয়েছে যাদের আইনি সেবা পাওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে দিনের পর দিন তাদের কারাগারেই কাটাতে হচ্ছে। ওসব বন্দিকে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় আইনি সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া কোনো বন্দি বিনা কারণে কারাগারে রয়েছে কিনা, কারা কর্তৃপক্ষকে তাও নিয়মিত যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। তবে সবকিছুর আগে বিচার প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি। কারা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ৬৮টি কারাগারের ৮০ হাজার বন্দির মধ্যে প্রায় ৫৯ হাজারই বিচারাধীন বা হাজতি বন্দি। আর কয়েদি হিসেবে প্রায় ২১ হাজার বন্দি সাজা খাটছে। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের কারাগারগুলোয় ৫৫ হাজার বিচারাধীন বন্দি ছিল। যা ওই সময় কারাগারে থাকা মোট বন্দির ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বিগত ২০২৩ সালে দেশের কারাগারগুলোয় বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৭০, যা মোট বন্দির ৭৪ শতাংশ। কারাগারে হাজতি হিসেবে থাকেন বিচার চলমান বা শুরু না হওয়া বন্দি। প্রথমে আমদানি ওয়ার্ড এবং পরে অন্যান্য ওয়ার্ডে তাদের স্থানান্তর করা হয়। আর বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওসব বন্দি কারা অভ্যন্তরে কোনো কাজে যুক্ত হতে পারে না। তবে সাজা কার্যকর হওয়া কায়েদি বন্দিরা কারা অভ্যন্তরে যুক্ত হতে পারে নানা উপার্জনমুখী কাজে। আর ওসব ক্ষেত্র থেকে আয়ের টাকা পরিবারের কাছেও পাঠাতে পারে। সূত্র জানায়, দেশের কারাগারগুলোয় বিগত ১৯৯৯ সালে বিচারের অপেক্ষায় থাকা বন্দির সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৩৬৮, যা মোট কারাবন্দির ৭৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ওই হিসাবে দেশের প্রতি লাখ মানুষের ৩৪ জনই তখন বিচারের অপেক্ষায় কারাবন্দি ছিল। ২০০৩ সালে কারাগারগুলোয় বিচারের অপেক্ষাধীন বন্দি ছিল ৪৫ হাজার ১৭৩ জন, যা মোট বন্দির ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ। বিচারের অপেক্ষাধীন বন্দির সংখ্যা ২০০৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৩৫৪, যা ওই বছরের মোট বন্দির ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ। ওই বছর প্রতি লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে বিচারের অপেক্ষাধীন বন্দি ছিলো ৩৩ জন। ২০১০ সালে কারাগারগুলোয় মোট বন্দির ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ বা ৫০ হাজার ৫৭৬ জন বিচারের অপেক্ষাধীন ছিলেন। বিচারের অপেক্ষাধীন বন্দির সংখ্যা ২০১৫ সালে আরো বেড়ে ৫২ হাজার ৮৭৬-এ দাঁড়ায়, যা মোট বন্দির ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ওই বছরগুলোয় প্রতি লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে সাজা ছাড়াই ৩৩ জন কারাবন্দি ছিলো। আর ২০২২ সালে বিচারের অপেক্ষায় থাকা বন্দি ছিলো ৬১ হাজার ৩৬৭ জন, যা মোট কারাবন্দির ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ওই বছর দেশের জনসংখ্যার প্রতি লাখের বিপরীতে বিচারের অপেক্ষায় ৩৫ বন্দিকারাগারে আটক ছিলো। সূত্র আরো জানায়, কারাগারে থাকা বন্দি বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে কয়েদি হিসেবে সাজা কার্যকর করা হয়। আর নির্দোষ প্রমাণ হলে মুক্তি পায়। কিন্তু বিচারিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার প্রভাব কারাগারগুলোতে পড়ছে। বর্তমানে দেশের কারাগারে যেসব বন্দি রয়েছে তাদের বড় একটি অংশই বিচারাধীন। আবার তার মধ্যে বড় একটি অংশের আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজ শুরুই হয়নি। ফলে কারাগারগুলোকে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি বহন করতে হচ্ছে। ফলে একজন বন্দির কারাবাসের ক্ষেত্রে যে ন্যূনতম অধিকার রয়েছে, তা অতিরিক্ত বন্দির জন্য উপেক্ষিত হচ্ছে। মূলত দেশের বিচারিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, তদন্তসহ বিচারিক কাজগুলো সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যে ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়, সে ধাপগুলো বিলম্বিত হচ্ছে আর কারাগারগুলোয় তার প্রভাব পড়ছে। বর্তমানে কারা কর্তৃপক্ষ যেখানে বন্দির থাকারই জায়গা দিতে পারছে না, সেখানে তার অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করবে কিভাবে। এদেশ বছরের পর বছর মামলা পরিচালনার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আনা এলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না। কারাগারে বন্দি রেখে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সেজন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। একই সাথে ভুক্তভোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বিচারাঙ্গনের সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের অর্থপূর্ণ সম্পর্কও জরুরি। এদিকে কারাগারগুলোয় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি থাকা প্রসঙ্গে গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ও নূর খান লিটন জানান, বন্দিদের দেখভালের দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের ওপর থাকে। আইন অনুযায়ী একজন বন্দির বাসস্থান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কিন্তু কারাগারগুলোয় ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি থাকায় স্বাভাবিকভাবে বন্দিরা প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা পায় না। এটা মানবাধিকার হরণ। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সব বন্দির জন্যই প্রাপ্য সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে ধারণক্ষমতার অধিক বন্দি থাকলেও তাদের প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে দাবি করে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মো. জান্নাত-উল ফরহাদ ইসলাম জানান, দেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে ৪৬ হাজার ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দি রয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার। অতিরিক্ত বন্দি থাকলেও তাদের আবাসন, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ঘাটতি নেই। বন্দি হিসেবে আইনে উল্লিখিত সব সুযোগ-সুবিধা তাদের জন্য নিশ্চিত করা হচ্ছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স